'তোমার দেহত্যাগের পর ত্রিশ দিনের দিনে তোমার সঙ্গে যে কথোপকথন হয়, তাহাতে তুমি বলিয়াছিলে, শুদ্ধাচার, শুদ্ধচিন্তা, শুদ্ধ ব্যবহার না হইলে তোমার সঙ্গে আর অধিক মিলন হইবার সম্ভাবনা নেই'- ১৯০৭ সালে 'অঘোর-প্রকাশ' গ্রন্থটির উদ্বোধনে এমন কথাই বলেছিলেন প্রকাশচন্দ্র রায়। উনিশ শতকের শেষ পাদে রচিত এই গ্রন্থ কি জনৈক পরলোক-বিশ্বাসী বিপত্নীকের বিলাপাখ্যান, নাকি 'শুদ্ধতা'-সন্ধানী এক বাঙালি ভদ্রলোকের পত্নীপ্রেমের উদাহরণ? আজ শতাধিক বছর পরে স্মৃতি-বিস্মৃতির ধূলো সরিয়ে এ বইয়ের পাতা ওল্টাতে বসে পাঠকের মনে এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। কার্যত, প্রয়াতা স্ত্রীকে 'তুমি' সম্বোধনে লিখিত এই গ্রন্থ ভিক্টোরীয় কালের বাঙালি ভদ্রলোকের পারিবারিক মননের এক দলিল। একই সঙ্গে, তা সমকালীন ব্রাহ্ম মূল্যবোধ, নববিধানের আদর্শ ও তা থেকে জন্মানো বিবিধ সংস্কার বা সংস্কারবিহীনতার দিকে দৃষ্টিপাত করে। এ বই একদিকে অঘোরকামিনী দেবীর জীবনাখ্যান, অন্যদিকে তা প্রকাশচন্দ্রের আত্মদর্শনও বটে। বাংলা ভাষায় এ ধরনের গ্রন্থের উদাহরণ বিরল। 'অঘোর-প্রকাশ'-এর এই সংস্করণটি সটীক। বিশ্লেষণী ভূমিকা, টীকা এবং প্রাসঙ্গিক নথি, চিত্র এবং তথ্য সংযোজিত হয়েছে এখানে। সে দিক থেকে দেখলে এই সংস্করণ নিছক 'ফিরে দেখা' নয়, তার চাইতে খানিক বেশি কিছু।