বাঙালির রবিবার মানে সপ্তাহান্তিক এবং একমাত্র ছুটির দিন। রবিবারের বাঙালি গার্হস্থ্যের কিছু নির্দিষ্ট চিহ্ন আছে। দেরি করে ওঠা, সময় নিয়ে বাজার, আয়েসি জলখাবার কিংবা গুরুতর মধ্যাহ্নভোজ সে সবের মধ্যে পড়ে। সেগুলির সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়ও কিন্তু অপরিহার্যতা আদায় করে নিয়েছে আবির্ভাবের সময় থেকেই। অনেক পাঠকই রবিবারের সকালটায় পড়েন মূল কাগজের খবরাখবর। আর দুপুরের নিঝুম আলস্যযাপনের অনুপান হিসেবে তুলে রেখে দেন রবিবাসরীয়। যথাসময়ে স্বাদ নেন ছোট ছোট নিবন্ধ, ছোটগল্প, ধারাবাহিক উপন্যাসের। তার পর নানা আলোচনায় উঠে আসে সেই গল্পগুলির কথা। ভাল লাগা, খারাপ লাগা নেহাতই আপেক্ষিক, কিন্তু আলোচনা যে হয়, সেও কিছু কম কথা নয়। রবিবাসরীয়-র গল্পের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে শব্দের সংখ্যা বেশ কম। প্রকাশিত পঁচানব্বই শতাংশ গল্পই ১৭০০-১৮০০ শব্দের মধ্যে। এবং সেই কারণেই গল্পগুলো অনেক বেশি নির্মেদ, শাণিত এবং সুচীমুখ। একটুও বেশি কথার জায়গা নেই, বরং ধীমান পাঠককে নানা ইঙ্গিত-সঙ্কেতে সে জানায় নানা অনুচ্চারিত বক্তব্য। সেই কারণেও রবিবাসরীয় গল্পের প্রতি পাঠকের আগ্রহ চিরকালীন। এই সংকলনের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রকাশিত গল্পের কালপর্ব। ২০১৭ থেকে ২০২২, এই অর্ধযুগ সময়ে প্রকাশিত গল্পসম্ভার থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে অর্ধশতটি, মানে পঞ্চাশটি গল্প। সময়টি দীর্ঘ নয়, কিন্তু এর গভীর তাৎপর্য অন্যত্র। এই অর্ধযুগের ঠিক মাঝামাঝি সময়েই দেশ এবং জাতি দেখেছে এক আশ্চর্য কঠিন সময় করোনা অতিমারি এবং দীর্ঘকালীন লকডাউন। তার জেরে সমাজজীবনে ব্যাপকতর পরিবর্তন। সে পরিবর্তন ছাপও ফেলেছে সমকালীন লেখকদের কলমে। সে দিকচিহ্নও ধরা থাকবে এই সংকলনের বেশ কিছু গল্পে। জীবনের বাঁক বদল কী ভাবে সাহিত্যে ছাপ ফেলে এবং ২০২০ সালের মার্চ এপ্রিলের আগে যে ধরনের গল্প কারও ভাবনাতেও ছিল না, কী ভাবে সেই গল্প জায়গা করে নেয় লেখকমানসে, তারও দলিল হয়ে থাকবে এই সংকলনের কয়েকটি গল্প।