দুই বাংলার বাঙালির পরস্পরকে জানার তাগিদ আজ অকপট। এবং সেটা তো খুবই স্বাভাবিক। বসুধাই এখন কুটুম্ব, আর দুই প্রতিবেশী দেশ-যাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক, ইতিহাস এক, কিছুকাল আগে পর্যন্ত বর্তমানও এক-রাজনৈতিক কারণে বিচ্ছিন্নতা ঘটলেই, তাদের মধ্যে টান থাকবে না, তা কি হতে পারে? ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত চড়াই-উতরাইয়ে বন্ধুর বাংলাদেশের যে যাত্রাপথ, তার গোটা প্রেক্ষাপটটাই অনুধাবন করা দরকার-বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের বাঙালিকে, তার রাজনীতি সাহিত্য সংস্কৃতিকে চেনার জন্য। জানা দরকার এই দেশের ভৌগোলিক ও জনজীবনের বিন্যাস, এই দেশের আত্ম-উপলব্ধির ধরণ (শুধু নাগরিক নয়, গ্রামীণ মানুষেরও), মৌলবাদী ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার পিছুটান, মৌলবাদবিরোধী অসাম্প্রদায়িক চেতনার অভিযান, বাংলাভাষা নিয়ে আবেগ ও শিকড় সন্ধান, রবীন্দ্রনাথকে আশ্রয় করে কীভাবে বাঙালি পরিচয়ের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হয়েছিল তার ইতিহাস, একুশে ফেব্রুয়ারী আর একাত্তরের স্বপ্ন, স্বাধীনতা-পূর্ব স্বপ্নের সঙ্গে-সঙ্গে স্বাধীনতা-উত্তর স্বপ্নভঙ্গ, পুনরপি ফিরে ফিরে আসা দুর্মর স্বপ্ন। এ-সবের পেছনে যে-সব তথ্য আছে, তা হয়তো একেবারে অজানা নয় পশ্চিমবঙ্গ বাসীরও, কিন্তু এগুলোকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মনোজগৎটা তাদের কাছে স্পষ্ট নয় সবসময়। অথচ বাংলাদেশের অজস্র অসংখ্য লেখায় তা ব্যক্ত হয়েছে, এখনও হচ্ছে- এই সংকলনে তারই কিছু হদিশ। বাংলাদেশের সাহিত্যপাঠে, বস্তুত সামগ্রিকভাবেই বাংলাদেশকে হৃদয়ঙ্গম করার লক্ষ্যে এগুলো নিশ্চয়ই সহায়ক হবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গের পাঠকই লক্ষ্য নয়। বাংলাদেশের পাঠকের কাছেও এই সংকলনের মধ্য দিয়ে আত্মসমীক্ষার একটা ছবি হাজির হবে, এই আমাদের প্রত্যাশা। প্রতিবেশী দেশে তাঁদের ভাবনার কোন পরিচয় পৌঁছোতে চলেছে, সেটা জানার কৌতূহলও তো থাকতে পারে এবং তাতে আত্মবোধের একটা ভিন্ন আয়তনও গড়ে ওঠে হয়তো।
Bangali O Bangladesh A collection of essays from Bangladesh