১ সংস্করণ প্রকাশিত হয় তখন পর্যন্ত পার্সি ব্রাউন থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী কলা-ঐতিহাসিক বা -সমালোচকরা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের সঙ্গে চিত্ররীতি ও দর্শনকে যুক্ত করে ভারতীয় চিত্রকলার কোনও সামাজিক ইতিহাস লেখেননি। যা কিছু গবেষণা ও রচনা হয়েছে তা অধিকাংশই আঞ্চলিক বা বিশেষ যুগনির্ভর। সেদিক থেকে অশোক মিত্রের 'ভারতের চিত্রকলা' ভারতীয় ভাষায় এ-দেশের শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস রচনায় প্রথম প্রয়াস বলা যায়। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারতের চিত্রকলার বিবর্তন ও সমৃদ্ধি দুটি খণ্ডে আলোচিত হয়েছে। প্রথম খণ্ড শেষ হয়েছে আঠারো শতকের প্রথমার্ধে। দ্বিতীয় খণ্ডের সময়সীমা খ্রীস্টীয় আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের নবম দশক। অনেক উৎকৃষ্ট ও প্রাচীন এবং আধুনিক ভারতীয় ছবি ভারতের বাইরে থাকায় ছাপা-ছবির অ্যালবামের উপরেই প্রথম সংস্করণে তাঁকে বেশি নির্ভর করতে হয়। ১৯৫৮ সালের পর থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু চিত্রশালা ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে ছবি দেখবার ফলে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আবেগ ও প্রত্যয় আসায় অশোক মিত্রের প্রথম প্রচেষ্টা ও আলোচনা এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে সমৃদ্ধি পেয়েছে সাদা-কালো ও বহুরঙে ছাপা চিত্রাবলী সম্ভার, যা এই ধরনের ইতিহাস রচনায় একটি নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। ভারতের চিত্রকলার বিবর্তনের ইতিহাস বিবৃত করতে গিয়ে লেখক শুধুমাত্র রজার ফ্রাইয়ের দৃষ্টিতে ভারতীয় চিত্রকলার মধ্যে বিশ্বপ্রকৃতির মূল সত্তার পরিশুদ্ধ রূপের প্রতি মুগ্ধতা কিংবা রেমব্রান্টের লেখায় ভারতীয় চিত্রকলার দুর্লভ মিতব্যয়িতার অকুণ্ঠিত স্তুতির কথাই বলেননি, সেই সঙ্গে দেখিয়েছেন ভারতীয় শিল্পীর পক্ষেও পাশ্চাত্য চিত্রকলার বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আত্মস্থ করার একান্ত প্রয়োজনীয়তার দিকটিকেও। এই তুলনার টানাপোড়েনে বিস্তারিত হয়ে অশোক মিত্রের 'ভারতের চিত্রকলা' সমৃদ্ধ হয়েছে। যুগপরম্পরায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের সঙ্গে ভারতীয় চিত্রকলার সবঙ্গিীণ রসগ্রহণে বইটি ৯৫৬ সালে যখন 'ভারতের চিত্রকলা'র প্রথম ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসে নির্ভরযোগ্য দলিল হয়ে থাকবে।