বাংলা ভাষায় এ যাবৎকালের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে একটি দুর্লভ সংযোজন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই। বাংলাদেশের উনসত্তরের গণ- আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত হয়েছে এই কালজয়ী উপন্যাসটি। বহু প্রশংসিত উপন্যাসটি সম্পর্কে বাংলাদেশের বিদগ্ধ সমালোচক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, 'এ উপন্যাস আমাদের স্বপ্ন গর্ব হতাশা রক্তশ্রম আর ভালোবাসার সময়ের অনবদ্য দলিল হিসেবেই আমাদের কাছে উপস্থিত হয়'। সুতীব্র আবেগ রয়েছে উপন্যাসটির চরিত্র গঠনে অথচ নেই কোনো হালকা চটকদারি, আরোপণ। বাংলা সাহিত্যে মাইলস্টোন হয়ে যাওয়া উপন্যাসটি বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে স্মরণীয় গ্রন্থ হিসেবেই সংগ্রযোগ্য হয়ে উঠবে। 'চিলেকোঠার দুর্গ থেকে ওসমানকে বেরিয়ে পড়তে প্ররোচনা দেয় হাড্ডি খিজির যে নিজের বাপের নাম জানে না, যে বড়ো হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়, যার মা বউ দুজনেই মহাজনের ভোগ্যা এবং গণঅভ্যুথানের সদস্য হওয়ার অপরাধে মধ্যরাতে কারফু-চাপা রাস্তায় সে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয় মিলিটারির হাতে। নিহত খিজিরের আমন্ত্রণে ও আহ্বানে সক্রিয় সাড়া দিয়ে ওসমান ঘরের তালা ভাঙে। সবার অগোচরে, আনোয়ারকে ঘুমন্ত রেখে বেরিয়ে আসে রাস্তায়, কারফুর দাপট অগ্রাহ্য করে। তার সামনে এখন অজস্র পথ'। 'চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মোহাম্মদ ওসমান গণি ওরফে রঞ্জু। উপন্যাসটির শুরুতে দেখা যায় বিচ্ছিন্নতা, আত্মমন্ত্রণা ও একাকিত্বের গভীরতর অসুখে আক্রান্ত ওসমান। শেষ অধ্যায়ে দেখা যায় রূপান্তরিত অন্য এক ওসমানকে। ওসমানের পরিবর্তনকে সুনির্দিষ্ট না করে কালের হাতে সমর্পন করেছেন ইলিয়াস। ওসমানের সামনে রেখেছেন হাড্ডি খিজিরকে, যে শৃঙ্খল ভাঙার জন্য কারফু উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে।