বাংলার লোকসাধারণের আপসহীন পরাক্রমের কথকতাকে নিয়ে রচিত হয়েছে 'দ্রোহকথা'। এই নতুন কবিতা সংকলনে কবি তুলে ধরেছেন সেই সব প্রান্তিক মানুষদের কথা যারা নিজেদের আত্মগরিমাকে নিজেদের আত্মমর্যাদাকে কখনো কোনো অবস্থাতেই কারো কাছে বিকিয়ে দিয়ে বাঁচতে শেখেন নি। 'দ্রোহকথা'র প্রথম কবিতায় কবি লিখেছেন, 'মা বলেছিলেন যা করেছিস ঠিক করেছিস। মাথা নিচু করে থাকবি কেন বাঁচতে হলে মাথা উঁচু করে বাঁচবি' (শ্রীচরণেষু মা)। বাংলা কবিতায় চার দশকেরও বেশি সময় জুড়ে বাংলার লোকসাধারণকে নিয়ে বাংলার লোকসাধারণের অনতিক্রম্য পৌরুষকে নিয়ে এই মহাকাব্যিক আলোকযাত্রার এই অনবচ্ছিন্ন সৃজনশীলতার বীজমন্ত্রের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে কবি জানিয়েছেন, 'আমার সারা জীবন জুড়ে/আমার সারা সৃজন জুড়ে/অখ্যাতদের নিয়ে যে লেখালেখি দেখি তার সমুখে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি/জন্মদিনে' কবিতাগুচ্ছের সেই কবিতা নিয়ে আছেন দাঁড়িয়ে (বীজমন্ত্র)। এভাবেই 'শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি'। কবিতায় কবির অকপট স্বীকারোক্তি, '৭ই মার্চের সেই সকালে সেই ইস্কুলবেলাতেই তিনি খাড়া করে দিয়েছিলেন আমার শিরদাঁড়া/রেসকোর্সের জনপ্লাবিত। ময়দান থেকে বেতার তরঙ্গে/সেই ইস্কুলবেলাতেই তিনি আমার কানে দিয়েছিলেন মন্ত্র/আপসহীন প্রতিবাদের মন্ত্র/দাবায়ে রাখতে পারবা না' (শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি)। সংকলনের শেষ কবিতায় গ্রাম বাংলার এক কিশোরীর দৃপ্তকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে প্রতিবাদের নির্ভীক কন্ঠস্বর, 'মুরগির ঘরে থাকছি বলে আমি কিন্তু মুরগি না।/আমি রুবিনা বেওয়ার মেয়ে রিজিয়া/আমি এত সহজে ছেড়ে দেব না লড়াইটা।' (দ্রোহকথা)। সব মিলিয়ে বাংলা কবিতায় দ্রোহকথা' এক ব্যতিক্রমী দুঃসাহসী প্রাতিস্বিক সংযোজন।