বিষয় যা-ই হোক, তাঁর নিবন্ধগুলিতে সর্বদাই অদৃশ্য হয়ে আছেন তিনি নিজে, অস্তিত্ববান হয়ে আছে তাঁর ধ্যান-ধারণা, আছে স্তরে স্তরে প্রাচীন থেকে আধুনিককেও পেরিয়ে যাওয়া জ্ঞান। আছে অনন্ত কাল ও দেশ। এবং এইসব আছে বলেই মণীন্দ্র গুপ্ত এক আশ্চর্য গদ্যের লেখক। আলোচনা করতে গিয়ে কেউ বলেছেন-'খেলতে খেলতে লেখা আনন্দে উদ্ভাসিত তাঁর গদ্য।' কেউ বলেছেন, 'অন্তহীন সুষমা সেই গদ্যের।' কেউ বলেছেন, 'ভাষা বিষয়ানুগামী, অকাট্য, যথাযথ।' একজন বললেন, 'মায়াময় তাঁর গদ্যশৈলী।' 'জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, শিশুসাহিত্য, বইয়ের ছবি, হাজার বছরের বাংলা কবিতা সম্বন্ধে তাঁর বিশ্লেষণ ও আলোচনা গভীর অনুভবময়।' বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই বোঝা যায়, এই লেখক জীবন ও পৃথিবীকে দেখেছেন নির্ভেজাল পুরুষের চোখে-ফলত তাঁর দৃষ্টি দুঃসাহসী ও সংস্কারহীন। নিজেকে ঠাট্টা করে নিজেই বলেন, 'আমি এক পিদ্রু সাহেব, তেড়াবেঁকা সোলা-হ্যাট মাথায় দেশে দেশে গোল্ড প্রসপেক্ট করে বেড়াই।' মণীন্দ্র গুপ্তের মমতা ও ভালোবাসা চতুর্থ পৃথিবীর আদিম অধিবাসী ও বিলীয়মান জীবজন্তুদের উপর। তাঁর বিশ্বাস, জলস্রোত, গাছ ও প্রাণীকূলের একজন হয়ে থাকাতেই মানুষের শ্রেয়। গদ্যসংগ্রহের এই খণ্ড সেই চিন্তাপ্রবাহের সমষ্টি।