এ কদিন উত্তর কলকাতার সিমলেপাড়ায় দুষ্টুমি করে ঘুরে বেড়াত যে-কিশোর, কুস্তির আখড়ায় লড়াইয়ে নামত, সে কীভাবে যেন একসময় সংগীতকে আপন করে নিল। সুধাসাগরের তীরে এসে দাঁড়াল সে। সেই প্রথম যৌবনে সংগীতই হয়ে উঠল তার একমাত্র সাধনা, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। আরও পরে তার ধ্যান জ্ঞান প্রেম ঈশ্বর। সেদিনের সেই কিশোর আজকের 'জাতীয় শিল্পী' মান্না দে। বাড়ির সাংগীতিক পরিবেশ, বিশেষত প্রবাদপ্রতিম শিল্পী তথা তাঁর ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও আশীর্বাদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট সুরসাধকদের সাহচর্য পেয়েছিলেন। সুদীর্ঘ যাট বছরেরও বেশি সময় মান্না দে তাঁর সংগীত-সাধনাকে অব্যাহত রেখেছেন অপরিসীম নিষ্ঠায়। আজ তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর কথা, তাঁর গানের কথা বলে শেষ হওয়ার নয়। কত স্মৃতি, কত সুর সেই কথাপ্রবাহের পরতে পরতে। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি নিজেই তাঁর সংগীত-জীবনের কথা কখনও কখনও লিখেছেন। কিন্তু এই প্রথম তাঁর পূর্ণাঙ্গ আত্মকথা। এখানে সংগীত-জীবনের কাহিনীই শুধু নয়, তাঁর ব্যক্তিজীবনের অন্দরমহল পাঠকের সামনে তিনি খুলে দিয়েছেন নিঃশেষে। তাঁর সময়ানুবর্তিতা, নিয়মনিষ্ঠা, ঔদার্য, স্নেহশীলতা, মরমী মন, নিরহংকারী চরিত্র ও সংবেদনশীলতার নানা নিবিড় অনুষঙ্গ ও ছবি এমনভাবে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। 'জীবনের জলসাঘরে' এক মহান ও চিরশ্রবণীয় শিল্পীর নিছক আত্মজীবনী নয়, দেশ-কাল-সময়ের প্রেক্ষাপটে আঁকা সুরলোকের এক বহুবর্ণী চিত্র