রাঢ় বাংলার মাটি আর মানুষের বাঁচনকথা নিয়ে 'যিখানে মাটি লালে লাল'। বাংলার লোকসাধারণের কবিতার এই সংকলনটিতে যে মানুষজনের কথা তুলে ধরা হয়েছে তারা হল 'সেই মানুষ যারা একদিন দাঁতে দাঁত দিয়ে/কাঁধে কাঁধ দিয়ে/পাথরের পারা গতর লিয়ে/বুনা মাটির দেশে দেশে/পাহাড়েপাহাড়ে/বনে বনে/গোরা পল্টনের সাহেবদের কাছে/ঝিঙাফুলা বাঘের পারা গাঙাই বলেছিল 'শালা, ই দেশ আমার/ই মাটি আমার/তরা আমার মা'কে কাড়েছিস/আমরা তদের জীউ লিয়ে ছাড়ব।' রাঙামাটির কালো পাথরের ডুংরি পাহাড়ের চেয়েও বিশাল হৃদয়ের এই মানুষেরা এই কবিতা সংকলনটির প্রণম্য প্রাণপুরুষ। রাঢ়ের লাল ধূলোর রুক্ষকাকুরে মাটিতে মিশে থাকে একঅনতিক্রম্য পৌরুষ। এ মাটির পরতে পরতে জমে থাকে অপরাজেয় জীবন সংগ্রামের একদুর্দম্য জেদ। আবার তারই গহনে নিরন্তর প্রবাহিত হয় একঅন্তহীন অফুরান ভালোবাসার স্রোত। দিন যাপনের প্রাত্যহিক দুঃখকষ্টে ক্ষিদে তেষ্টাকে মাড়িয়ে ধু ধু রুক্ষমাটির বুকে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্র পলাশের মতন আশ্চর্য একজীবনরসের প্রাচুর্যে এ মাটির গতরজীবী মানুষেরা যেভাবে বাঁচা ও আরও বেশি বাঁচার তাগিদে আপসহীন সংগ্রামে নামে তাদের সেই বাঁচন লড়াইয়ের কথা আর কাহিনিকে তাদেরই মুখের ভাষায় তুলে ধরতে চেয়েছে 'যিখানে মাটি লালে লাল'।