১৯০৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর। আন্দামানের সেলুলার জেলের মহিলা বিভাগে বন্দিনী নীলামণির বিবাহ আজ। কোন এক দাগি আসামিকে বিবাহ করে তাকে এবার সংসার পাততে হবে সদ্য গড়ে ওঠা 'স্বাবলম্বন' গ্রামে। এদিকে ওই একইদিনে পোর্ট ব্লেয়ারের জাহাজঘাটায় এসে নামছেন ডাকসাইটে 'গোলাওয়ালা'রা। কুখ্যাত আলিপুর বোমা মামলার রাজবন্দি তাঁরা। হাতে পায়ে পড়ছে শিকল। প্রবেশ করছেন কুখ্যাত সেলুলার জেলের নরকে। শুরু হচ্ছে এক অন্য লড়াই। শত অত্যাচারেও নিজেদের মেরুদণ্ড বেঁকতে না দেওয়ার মহাসংগ্রাম! ভারতীয় উপমহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ সরকারের পেনাল সেটলমেন্ট। যেন এক অন্য পৃথিবী! এখানে শাসকের অঙ্গুলিহেলনে চাপা পড়ে যায় অকথ্য অত্যাচার। প্রতিদিনের 'অসম্ভব' কাজের 'টার্গেট' পূরণ করতে না পারলেই ভয়াবহ শাস্তি। ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছেন মেধাবী আবেগী উল্লাসকর। ওদিকে কলকাতায় অপেক্ষারত তাঁর প্রেমিকা লীলা। ধীরে ধীরে কি সেই অপেক্ষাও পরিণত হচ্ছে হতাশায়? কিন্তু তবুও যে আগুন জ্বলে ধিকিধিকি! সেই আগুনের লেলিহান শিখায় ছারখার হয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশদের ঔদ্ধত্য। কোন এক বিশ্বাসঘাতক খবর দিচ্ছে বিপ্লবীদের ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের। নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন। তারপর?... 'কৃষ্ণসিন্ধুকী' হারিয়ে যাওয়া একদল মেয়ের উপাখ্যান। এই কাহিনী বিস্মৃতপ্রায় সেই বিপ্লবীদের মর্মগাথা, যারা যৌবনে প্রবেশের আগেই শুধুমাত্র নিজের দেশকে ভালবেসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবে। এই উপন্যাস সেই উত্তাল সময়ের দলিল- একদল বাঙালির জয়গাথা, যারা আমাদের বুকে শিহরণ তোলে। মনে করায়, "ভীতু বাঙালিও একদিন বীর ছিল।" বিংশ শতকের গোড়ার সেই উত্তাল সময়ের পটভূমিকায় রচিত এই কল্পকাহিনীর রুদ্ধশ্বাস ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হল শুধুমাত্র আদি ও অনন্ত মহাকাল!