পঞ্চাশটি গল্পের বেশিরভাগই উত্তরবাংলার গ্রাম-শহর এবং তার মানুষজনকে নিয়ে। পাঠক এসব গল্পে এখানকার প্রকৃতি এবং প্রাচীন ঐতিহ্যকেও খুঁজলে হয়তো পাবেন। মূলত আশি-নব্বই দশকে লেখা এ গল্পগুলি এই সময়ের সমাজ-রাজনীতি-আবেগ-স্বপ্নের ফসল। দু-একটি গল্পে (যেমন, 'আটশো বছর আগের একদিন') ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একটি দুর্ঘটনার প্রতিফলন। তাও বিশেষ স্থান-মাহাত্মোই। আটের দশকের গোড়ার প্রশাসনিক-রাজনৈতিক আন্দোলন 'অপারেশান বর্গা' নিয়ে লেখা 'আইন- শৃঙ্খলা' এবং এরকম আরও একটি-দুটি গল্প। 'দেবাংশী' এই পরিধির বাইরে গিয়ে মায়া বাস্তবতায় অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। কলকাতার প্রেক্ষাপটে আছে 'মহাবৃক্ষের আড়াল', যেখানে ভিয়েতনাম থেকে চালান হয়ে আসা গাছের গুঁড়ি একের পর এক করাত ভেঙে ফেলে, কেননা তাদের দেহে বিদ্ধ হয়ে আছে অসংখ্য বুলেট। কত বুলেট আটকেছে এই বৃক্ষ? কত ঘনফুট বিষবাষ্প শুয়েছে? গল্পের নায়ক অনুপমকেও নিজের কাছ থেকে বাঁচিয়ে দেয় এই গাছ। 'স্মিংকস' গল্পে রহস্যময় যৌন সম্পর্ক, যা পুরুষকে সত্যিই যুক্তিবুদ্ধির বাইরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলতে পারে। 'ফাল্গুনী রাতের পালা'য় সেই রহস্যময় সম্পর্ক আবার ঠিক এর উলটো, সেখানে স্ত্রীলোক বাঁধা পড়ে এমন কুহকে, যার কোনো স্বাভাবিক ব্যাখ্যা হয় না। আছে পাগল, বেশ্যা, ধানচোর, ভবঘুরে, ওষুধ ও তাবিজ বিক্রেতাকে নিয়ে গল্প। আছে চোরাচালানকারী, মস্তান এবং এমন স্ত্রীলোক যার শরীরের সংস্পর্শে কখনও ঘরের চালা দপ করে জ্বলে উঠতে পারে ('মানবদেহের গৌরব')। 'পিতৃহত্যা বিষয়ক' গল্পে অত্যন্ত নিরীহ বীরেন তার বাবাকে কেন খুন করে ফেলে? এই পঞ্চাশটি গল্পে এসব ছাড়াও আছে কৃষক, মজুর, মিস্ত্রি, সাধারণ মধ্যবিত্ত, গ্রামা ভূস্বামী, আরও অসংখ্য ধরণের মানুষ যাদের অধিকাংশই লেখকের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েছে