দেশেবিভাগ নিয়ে তেমন স্মরণীয় উপন্যাস বাংলাভাষায় লেখা হয়নি। দু-পার বাংলায় ছড়ানো সমান্তরাল বাঙালিজীবন নিয়েও না। সেই অপূর্ণতাকেই দূর করল এই বিশিষ্ট, ব্যতিক্রমী ও বড়-মাপের উপন্যাস। বিশাল ক্যানভাসে চিত্রিত এই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ একইসঙ্গে ছুঁয়ে আছে এপার এবং ওপার বাংলা। শুরু সেই পঞ্চাশের মধ্যভাগে। দু-বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের পালাবদলের স্রোত কীভাবে এসে মিশেছে এই আশির দশকের মোহনায়, এ-উপন্যাস তার এক জীবন্ত দলিল। দুই বাংলার দুই পরিবারকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাসে বিশেষ কোনও চরিত্রকে মূল চরিত্র বলা যাবে না। একই সঙ্গে অনেকগুলি প্রধান চরিত্র। এইসব চরিত্রের কেউ-কেউ আবার পূর্ব বা পশ্চিম বাংলার গণ্ডিতেই আবর্তিত নয়, ইউরোপ- আমেরিকাতেও গেছে। ফলে, কলকাতার কফি হাউসের পাশাপাশি কখনও আবার আমেরিকার চোখ-ধাঁধানো শহরের কথা এই উপন্যাসে। 'পূর্ব-পশ্চিম'-এই নামকরণেও যেন নিহিত ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা। এ-উপন্যাসে শুধুই পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার কথা নয়। পূর্ব গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তর পটভূমিও এর অন্তর্গত। আবার মানুষের জীবন ও মনে যে পূর্ব ও পশ্চিম, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উত্থান-পতন, সূচনা ও দিনাবসান- তাও যেন সূক্ষ্মভাবে প্রতিফলিত এই নামকরণে। 'সেই সময়'-এর লেখকের কলমে এই সময় নিয়ে লেখা 'পূর্ব-পশ্চিম' বাঙালি জীবনের আধুনিক গদ্য মহাকাব্য।