করোনার ত্রাস তখনও অস্তমিত হয় নি, বলতে গেলে সেই সময় করোনার স্লগ ওভার চলছে। প্রখর রৌদ্রে পুরুলিয়াতে নিজেদের প্রথম চলচ্চিত্র 'বৃষ্টির ফেরিওয়ালা'-র শুটিংয়ে সবাই ব্যস্ত। পরিচালক হিসেবে আমার বা চিত্রগ্রাহক হিসেবে পার্থর দু'জনেরই এটা স্বাধীনভাবে প্রথম বড় কাজ। এছাড়া অন্য কলাকুশলীরা বা অভিনেতা- অভিনেত্রীদের মধ্যে কয়েকজনকে বাদ দিলে অনেকেই চলচ্চিত্রে প্রায় নতুন! তাই এক অর্থে বেশ চাপে ছিলাম আমরা! পার্থসহ ইউনিটের সবাই মাঝে মাঝেই আমার কাছ থেকে মিষ্টি মুখের গালাগাল অথবা রূঢ় ভাষায় ভালোবাসা পেত! সেই শুটিংয়েরই শেষ দিনে দুপুরে দু'জনে বসে চিড়ে-দই-বাতাসা সহযোগে মধ্যাহুভোজ সারছি, তখন পার্থ আমায় বলল, "দাদা, যদি কিছু মনে না কর একটা কথা বলি?" সন্মতি পেয়ে বলল, "এমন একটা গোয়েন্দা চরিত্র কি সৃষ্টি করা যায় না যে তথাকথিত গোয়েন্দাদের মত হবে না! আমরা তাকে নিয়ে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ বানাবো!" বেশ মনে ধরে ব্যাপারটা। এমনিতেই প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরাশর বর্মার আমি ভক্ত। তারপর 'হেরেম্ব হাজরা' চরিত্রের বিন্যাস শুরু হয়। 'হেরেম্ব হাজরা'-র পদবিটা আমার ভাবনা হলেও নামটা পার্থর ভাবনাপ্রসূত। লেখা শুরু হয়ে শেষ হলেও প্রোডিউসারের অভাবে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা বানানোর আশা ত্যাগ করতে হল। আমার সব লেখার প্রথম পাঠক হল আমার স্ত্রী চন্দ্রানী। তারই পরামর্শে একটি অন লাইন ম্যাগাজিনে কিছু পর্ব প্রকাশ করি। হেরেম্ব হাজরাকে সেখানকার পাঠকরা বেশ পছন্দ করেন। তাদের কাছে 'হেরেম্ব হাজরা' কালক্রমে 'হেরেম্বদা'-তে পরিনত হয়। তারপর কাকতালীয় ভাবে 'ছাপাখানা'-র দীপায়নবাবুর সংস্পর্শে আসি। মূলত এই পার্থ, দীপায়নবাবু ও চন্দ্রানীর উৎসাহে ছাপার অক্ষরে হেরেম্বকে সর্বসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটা স্বীকার্য্য পরাশর বর্মার প্রভাব থাকা সত্ত্বেও হেরেম্ব নিজের বৈশিষ্ট্যতে স্বতন্ত্র। এই লেখার শৈলীও অনেকটাই ভিন্ন। প্রথমে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা করার উদ্দেশে লেখার জন্য এই কাহিনীর লেখনশৈলী অনেকটাই চিত্রনাট্যের মত সর্বাপেক্ষা মজার বিষয় হল কাহিনীবিন্যাস কখনও বর্তমানে কখনও অতীতে বিচরণ করে। ফলতঃ শুধুমাত্র রহস্য কাহিনীর রোমাঞ্চ উদ্ধারের জন্য একটি মূহুর্ত বা কোন পর্ব বাদ দিয়ে পড়লে কাহিনীটি দুর্বোদ্ধ হয়ে উঠবে। হেরেম্ব নিজেকে কখনই গোয়েন্দা বলে না। পেশায় সাংবাদিক হেরেম্ব নিজেকে সাংবাদিক বলতেই ভালবাসে। হেরেম্বর সহযোগী তার ছায়াসঙ্গী ফোটোগ্রাফার পদা। আর আছে হেরেম্বর পুলিশ বন্ধু পাস্তু (এই কিস্তিতে তার উল্লেখ থাকলেও সে অনুপস্থিত)। হেরেম্বর জীবন অন্য পাঁচটা গোয়েন্দার মত অত রোমাঞ্চকর নয়, তার জীবন আর পাঁচটা বাঙ্গালীর মত ডাল-ভাতের। কিন্তু যে ঘটনাগুলোর সাথে সে জড়িয়ে পড়ে সেই ঘটনাগুলো রোমাঞ্চকর! অবশেষে এটাই বলতে পারি যে পাঠকরা 'হেরেম্ব হাজরা'-র গপ্পো পড়বেন তাদের জীবনযাত্রাই হেরেম্বর প্রকৃত জীবন।