দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীকেন্দ্রিক রচনা ও স্মৃতিচর্চায় দেশ-কাল-সময়ের, স্বকাল-স্বজনের অদ্ব্যর্থ পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে।- যে-গুণে কোনো রচনা শুধু চলমানতার সঙ্গবৈভবে নিজেই সময়ের সাক্ষী থেকে সারথি হয়ে ওঠে। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে থাকা এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আপাত স্থির, অথচ সদা পরিবর্তনমান জীবন- সেই জীবনের সুখ-দুঃখ, মহত্ত্ব-সংকীর্ণতা, আনন্দ-বেদনা, বিধি-বিধান, আচার-বিচার-প্রথা-প্রকরণ, সম্পন্নতা-অপ্রতুলতা সবকিছুর নিখুঁত ও বিশদ অনুপুঙ্খের সযত্ন উপস্থাপনার মাঝে কখন যেন অনুভূত হতে থাকে প্রাতিষ্ঠানিক সমাজের ভরকেন্দ্রটির স্থিতি-অস্থিতির দোলাচল, তার সবেদন চাপ। পদানত দেশের প্রাদেশিক ভাষার এক লেখক-যাঁর জাতি ও ভূমি- পরিচয়ে অনার্জিত আভিজাত্য বা বনেদীআনার দাক্ষিণ্য নেই, তাঁর পক্ষে একটি সমগ্র ব্যবস্থা বা তন্ত্রকে যতটা খুলে দেখানো সম্ভব, দীনেন্দ্রকুমার ততটাই সবিক্রম বিস্তারে সেসব উপস্থাপিত করেন। এজন্য একজন পেশাদার লেখক হিসেবে যতটা দায় নেওয়া সম্ভব, তার থেকে অনেক বেশি দায় গ্রহণ করেন তিনি। দীনেন্দ্রকুমারের প্রণোদনাময় ভাষ্যে সেগুলি নিজেই ইতিহাসের সঙ্গী তো বটেই, বহু ক্ষেত্রে ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠে।