সূচনা পর্বের বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের উৎসাহী পাঠকের তালিকায় মেয়েদের স্থান যে উপরের সারিতে ছিল তা নিয়ে মনে হয় না বিতর্কের অবকাশ আছে। এর একটা কারণ অবশ্যই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র আর কেমন সেই দুনিয়ার হালচাল তা জানার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই সব কাহিনি। বাড়ির গিন্নি হোন বা সাক্ষর যুবতী, সবাই সেদিন মজেছিলেন গোয়েন্দা কাহিনির মৌতাতে। বাংলা গোয়েন্দা কাহিনির ইতিহাস আলোচনায় তবুও বিশেষ কল্কে পাননি এই মেয়েরা। অধরাই থেকে গেছে তাঁদের সক্রিয় যোগদানের ইতিবৃত্ত। এর একটা কারণ যদি হয় তথ্যাভাব, তবে অন্যটা অবশ্যই দৃষ্টিভঙ্গি। যে মেয়েদের বিবেচনা করা হত স্রেফ পাঠক বলে, তাঁরাই বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষদিক থেকে শুরু করলেন গোয়েন্দা গল্প লেখা। তাঁদের এই নতুন ভূমিকা আদপেই সহজ ছিল না, প্রতিকূলতা আর সমালোচনা ছিল প্রবল। যে তথ্যাভাবের কথা আমরা বলছি অবশ্যই এটাও তারই একটা ফল। যত পারো ঠেকিয়ে রাখো, সুযোগ দিয়ো না বই প্রকাশের। এর পরেও কিন্তু দেখা গেল ১৯১৮ থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে অর্থাৎ চব্বিশ বছরে বই হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে মেয়েদের লেখা কম-বেশি তিরিশটি গোয়েন্দা কাহিনি। বই ছাপার হ্যাপা যে কতটা তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে এই মহিলা লেখকরা খুঁজে নেন বিকল্প পথ। নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে তাঁদের লেখা গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস।