শিক্ষা-রুচি-আভিজাত্য আর নিবিড় শিল্পবোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন এক পার্শ্বচরিত্র। নিঃসঙ্গ-লাজুক। চোদ্দ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগের পর থেকে একের পর এক ভাইবোনের মৃত্যুতে দীর্ণ, একাকী। অথ্য পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ, কৃতী মানুষটিকেও 'বাবামশায়' বলে আবিষ্কার করেছেন। স্পর্শ করেছেন রবীন্দ্রনাথের বেদনা, অসহয়তাকেও। শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র। বাবামশায়ের ইচ্ছাতেই আমেরিকা থেকে কৃষিবিজ্ঞানী হায়ে ফিরেছিলেন। আবার তাঁর ইচ্ছাতেই শিলাইদহের কৃষি গবেষণাগার ত্যাগ করে বিশ্বভারতী প্রশাসনের হাল ধরতে যান শান্তিনিকেতনে। তার মধ্যে ঠাকুরবাড়ির প্রথম বিধবাবিবাহ হয় রথী-প্রতিমার, বাবামশাইয়ের আগ্রহে, আয়োজনে। জীবন আবর্তিত হয়ে চলেছিল একইসঙ্গে ব্যস্ততা আনন্দ আবার উদ্দ্বেগ-বিড়ম্বনাতেও, এবং তার কেন্দ্রেও অনিবার্য বাবামশায়। তারপর সেই এক বাইশে শ্রাবণের পর থেকে রথীন্দ্রনাথ টের পেয়েছিলেন তথাকথিত, কাছের মানুষরাই শত্রুতায়, অসূয়ায় পায়ের নীচ থেকে মাটি সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। শুধু বিশ্বভারতীর জন্য নয়, কলুষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাঁর ব্যক্তিজীবনেরও। গভীর বেদনায়, ভগ্ন হহৃদয়ে একদিন শাস্তিনিকেতন ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকার ও প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ। শিবালিক পর্বতমালার কোলে এক প্রীতিময় অথচ বিতর্কিত জীবনযাপন করতে চলে গেলেন বন্ধুপত্নীকে নিয়ে। শান্ত-স্নিগ্ধ সুদূর প্রবাসেই আজীবন টানাপোড়েন আর আলো-আঁধারি জীবদ্দশারও পরিসমাপ্তি। এক বিরল ব্যতিক্রমী জীবনের সঙ্গেই সেই গুরুত্বপূর্ণ সময় চিত্রিত হয়েছে নিবিড় মনস্কতায়, মাত্রাবোধে আর লেখক নবকুমার বসুর কলমের মুনশিয়ানায়।। ধারাবাহিক প্রকাশের সময় থেকেই এই উপন্যাস বাঙালি পাঠককুলকে ভাসিয়েছিল সাহিত্যপাঠের অন্যতর আনন্দধারায়।